প্রাচীন ভারত-খনা বা ক্ষণা

22 অক্টো.

তাঁর আসল নাম লীলাবতী বলে অনুমান করা হয় ।কারণ, যে গণিত শাস্ত্রের বই পাওয়া যায়, তাতে খনার ছাপ স্পষ্ট। ছোট ছোট সূত্রে তিনি গণিতের মূল কথা গুলো বলেছিলেন।
“অঙ্কস্য বামা গতি” অর্থাৎ অঙ্ক দক্ষিণ থেকে বাম দিকেগণণা করিতে হইবে।
জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারীর যিনি বচন রচনার জন্যেই বেশি সমাদৃত, মূলত খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই খনার বচন নামে বহুল পরিচিত। মনে করা হয় ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তার আবির্ভাব হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে তিনি বাস করতেন পশ্চিমবঙ্গের অধুনা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাতের দেউলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম ছিন অটনাচার্য। খনার একটি বচনে এই পরিচয় পাওয়া যায়।
“ আমি অটনাচার্যের বেটি, গণতে গাঁথতে কারে বা আঁটি”
প্রশ্ন একটা থেকেই যায়, খনা যদি সিংহলের কন্যা হয়েই থাকেন, এবং উজ্জয়নীতে শ্বশুরবাড়ী হয়, তবে বচন গুলো বাংলায় লিখলেন কি করে? সিংহলে বা উজ্জয়নীতে তো বাংলা ভাষার প্রচলন ছিল না। যদিও কোনো প্রমান নেই, তবে মনে করা হয়, খনা গণিত শাস্ত্রের বইতে যে ভাবে ছোট ছোট সূত্র লিখেছিলেন, সেই ভাবেই সংস্কৃততে এই বচন গুলো লিখেছিলেন।পরে সে গুলো বাংলায় অনুবাদ করা হয়। বাংলায় অনুবাদ, চর্যাপদর আগেই হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।

অন্য একটি কিংবদন্তি অনুসারে তিনি ছিলেন সিংহলরাজের কন্যা। উজ্জয়নীর রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজ সভার প্রখ্যাত জোতির্বিদ বরাহপুত্র মিহিরকে খনার স্বামীরূপে পাওয়া যায়। কথিত আছে বরাহ তার পুত্রের জন্ম কোষ্ঠি গনণা করে পুত্রের আয়ু এক বছর দেখতে পেয়ে শিশু পুত্র মিহিরকে একটি পাত্রে করে সমুদ্র জলে ভাসিয়ে দেন। পাত্রটি ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে পৌছলে সিংহলরাজ শিশুটিকে লালন পালন করেন এবং পরে কন্যা খনার সাথে বিয়ে দেন। খনা এবং মিহির দু’জনেই জ্যোতিষশাস্ত্রে দক্ষতা অর্জন করেন। অনুমান,বরাহের প্রয়াণের পর মিহির একসময় বিক্রমাদিত্যের সভাসদ হন। একদিন পিতা বরাহ এবং পুত্র মিহির আকাশের তারা গণনায় সমস্যায় পরলে, খনা এ সমস্যার সমাধান দিয়ে রাজা বিক্রমাদিত্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গণনা করে খনার দেওয়া পূর্বাভাস রাজ্যের কৃষকরা উপকৃত হতো বলে রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। রাজসভায় প্রতিপত্তি হারানোর ভয়ে প্রতিহিংসায় বরাহের আদেশে মিহির খনার জিহ্বা কেটে দেন। এর কিছুকাল পরে খনার মৃত্যু হয়। এছাড়া বররুচি এর পুত্র মিহির তার স্বামী ছিলেন বলেও কিংবদন্তী আছে।

খনার বচন মূলত কৃষিতত্ত্বভিত্তিক ছড়া। আনুমানিক ৮ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে রচিত। তবে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অজস্র খনার বচন যুগ যুগান্তর ধরে গ্রাম বাংলার জন জীবনের সাথে মিশে আছে। এই রচনা গুলো চার ভাগে বিভক্ত।
• কৃষিকাজের প্রথা ও কুসংস্কার।
• কৃষিকাজ ফলিত ও জ্যোতির্বিজ্ঞান।
• আবহাওয়া জ্ঞান।
• শস্যের যত্ন সম্পর্কিত উপদেশ।
কয়েকটি খনার বচন:-
১) মঙ্গলে ঊষা বুধে পা, যথা ইচ্ছে তথায় যা
২) ডাকে পাখী, না ছাড়ে বাসা, খনা বলে, সেই তো ঊষা
৩) ভরা থেকে শূন্য ভালো যদি ভরতে যায় ।
আগে থেকে পিছে ভালো যদি ডাকে মায় ।।
৪) যদি বর্ষে কাতি, রাজা বাঁধে হাতি
যদি বর্ষে আগনে, রাজা নামে মালা হাতে মাগনে।
যদি বর্ষে পৌষে, কড়ি হয় তুষে।
যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুন্য দেশ।
৫) যদি অশ্বি কুয়া ধরে, তবে ধানগাছে পোকা ধরে
৬) কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত।
(সমাপ্ত)

One Response to “প্রাচীন ভারত-খনা বা ক্ষণা”

  1. Asmita অক্টোবর 23, 2011 Project Management 3:21 অপরাহ্ন #

    aro kichu jante parle valo hobe go..

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান